লেখক - প্রদীপকুমার রায়
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী মা দুর্গার আবির্ভাব হয়েছিলো ত্রিদেব - ব্রহ্মা ( সৃষ্টিকর্তা ) , বিষ্ণু ( পালনকর্তা ) ও শিব (বিনাশকর্তা ) এর মিলিত শক্তিপুঞ্জ থেকে । মা দুর্গাকে সৃষ্টি করা হয় দানব মহিষাসুরকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্য । কারন মহিষাসুর এমন বরে বলিয়ান হয়েছিলেন যে তাকে কোনো মানব , দানব বা দেবতা হত্যা করতে পারবে না, এমনকি ব্রহ্মা , বিষ্ণু বা মহেশ্বরও তাকে থামাতে সমর্থ হন নি । এমত অবস্থায় ঐ ত্রিদেব ব্রহ্মা ( সৃষ্টিকর্তা ) , বিষ্ণু ( পালনকর্তা ) ও শিব (বিনাশকর্তা ) তাদের মিলিত শক্তি দিয়ে উৎপন্ন করেন এক মহাজাগতিক ও মহাসুন্দরী এক নারীশক্তির , যিনি মা দুর্গা নামে অভিহিত হন ।
এইবার দেবীর ঘোটকে আগমন ও ঘোটকেই গমন । দেবীর বাহন সিংহ হওয়া সত্বেও , কেন দেবী ঘটকে আসবেন ও ঘোটকেই যাবেন তা জানা দরকার । এর উত্তর দুটি প্রাচীন গ্রন্থ “ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ” ও “ভগভতীদত্তম” এ পাওয়া যায় । এখানে বলা আছে সৃষ্টিকারী দেবতা ব্রহ্মার দশটি দেবশিশু ছিল। এইরকমই এক দেবশিশু মারিচীর নাতি কামণ্ডক কঠোর তপস্যায় দেবীকে তুষ্ট করেন। দেবী বরদানের জন্য মর্ত্যে আসেন । কিন্তু ভক্ত কামণ্ডক দেবীর রণচণ্ডী রূপ দেখে ঘাবড়ে যান। তারই আনুরধে , তখন থেকেই দেবী মর্ত্যে যাওয়া আসার জন্য যুদ্ধবাহন সিংহকে ছেড়ে হাতি , ঘোড়া , নৌকা ও দোলা-এই চারটি বাহন বেছে নেন। দেবী যাওয়া আসার জন্য প্রতি বছর এক একটি বাহন বেছে নেন। এই বাহনেরাই সিংহ সমেত মা দুর্গাকে সপরিবারে মর্ত্যলোকে আনে এবং কৈ্লাসে ফেরত নিয়ে যায়। বাহন আনুসারে জগতে ঘটে নানা প্রাকৃতিক ঘটনা ।
ঘোড়া ( ঘোটক )- যুদ্ধ , খরা , দুর্ভিক্ষ
; দোলা –
ধ্বংস , প্রলয় , মড়ক ;নৌকা – বন্যা ; হাতি ( গজ )- শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা ।
দুর্গাদেবীর মন্ত্রের সুর ও শয্যা এমনই ধ্যানলব্ধ বিষয় যাহা মহাভারত , চন্ডী , পুরাণ , ভাগবত কোথাও অস্বীকৃত হয় নি -- এমন কি বেদেও । প্রতিক্ষেত্রেই দেবীর স্মরণ ও স্তুতি মাহাত্য স্বীকার করা হয়েছে । শব্দের শয্যার দ্বারা যে শ্রবন , মনন, নিদিধ্যাসন হয় তা মনোজ্ঞ হলে সেটাই হবে ধ্যান । মনকে ত্রাণ করে যা, তাই হলো মন্ত্র আর তনকে (তনুদেহ )ত্রাণ করে যা , তাই হলো তন্ত্র । আদি মন্ত্র "ওম" থেকেই সম্ভবত "উমা" নামের উৎপত্তি । "ওম" অর্থাৎ অ-উ-ম , এতে আছে সৃষ্টি -স্থিতি -লয়ের বার্তা ।
No comments:
Post a Comment