Tuesday 30 July 2019

ওলাইচন্ডী বা বারোয়ারি পূজা - Olaichandi Puja

লেখক - প্রদীপ কুমার রায় ।
                                                    অতীতে প্রায়শই ওলাউঠা বা বিসূচিকা বা কলেরা রোগ মহামারী আকারে দেখা দিত  এবং এতে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটত। তাই এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পল্লীবাসীরা ওলাদেবীর বা  ওলাইচন্ডী বা বারোয়ারি পূজা করত।
                                    পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা , কোলকাতা ,হাওড়া , বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর প্রভৃতি অঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন পল্লীতে একসময় খুব গুরুত্বের সঙ্গে ওলাইচন্ডী বা ওলাদেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হতো। 
                                              হিন্দুপ্রধান অঞ্চলে শনি অথবা মঙ্গলবার পূজা হয় এবং পূজায় নিরামিষ নৈবেদ্য দেওয়া হয়। পূজার পৌরহিত্যে যেকোনো বর্ণ বা সম্প্রদায়ের লোকের এমন কি নারীরও অধিকার আছে। ওলাইচন্ডী বা ওলাদেবীর পূজা  তিন রকমের। শনিবার  ও  মঙ্গলবার অনাড়ম্বরে যে পূজা হয় তা বারের পূজা নাম পরিচিত। কারও মানত উপলক্ষে সামান্য আড়ম্বরের সঙ্গে যেকোনো সময় এঁর পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে।তাছাড়া কোথাও কলেরা রোগ মহামারী আকারে দেখা দিলে সে এলাকার লোকজন গ্রামের মোড়লের নেতৃত্বে সমষ্টিগতভাবে  এঁর পূজা দেয় ।
                                           ওলাইচন্ডী অন্যতম লৌকিক দেবতা। তিনি ওলাউঠা  বা বিসূচিকা বা কলেরা রোগের অধিষ্টাত্রী দেবী। তিনি ওলাইচন্ডী , ওলাবিবি ,বিবিমা  নামেও পরিচিত। ওলাদেবী অসাম্প্রদায়িক দেবতা অর্থাৎ ধৰ্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এঁর পূজা করা হত।
                                       ওলাইচন্ডী পূজা এককভাবেও  হয় আবার  ঝোলাবিবি , আজগৈবিবি , চাঁদবিবি , বাহড়বিবি , ঝেটুনেবিবি ও আসনবিবি এই ছয়জনের সঙ্গে একত্রেও হয়। এঁদের একত্রে বলা হয় সাতবিবি। করো কারো মতে এঁরা ব্রাহ্মী , মহেশ্বরী , বৈষ্ণবী , বারাহী , ইন্দ্রাণী প্রভৃতি পৌরাণিক দেবীর লৌকিক রূপ। সাতবিবির মধ্যে ওলাদেবীই প্রধান , ভক্তরা তাঁর উদ্দেশ্যেই পূজা দেয় , তবে অন্যরাও সে পূজার ভাগ পান। ওলাইচন্ডী বা ওলাদেবীর পূজা হয় পল্লীর বৃক্ষতলে পর্ণকুঠিরে । ওলাদেবীর পূজায় কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই। তবে দেবীর মূর্তি ও পূজাপদ্ধতিতে কিছুটা পার্থক্য ঘটত । হিন্দুপ্রধান অঞ্চলে এঁর আকৃতি হতো লক্ষী - সরস্বতীর মতো, গায়ের রং গাঢ় হলুদ বর্ণ , হাত দুটি প্রসারিত , কখনো  দন্ডায়মান , কখনো বা শিশুসন্তান ক্রোড়ে নিয়ে আসনে উপবিষ্টা , পরনে সাধারণত নীল শাড়ি এবং সর্বাঙ্গে নানা প্রকার অলংকার । 
                                    এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে ওলাইচন্ডী পূজা শুধুমাত্র পূজা উৎসবে সীমিত থাকে না। এর মধ্যে থাকে গান, যাত্রাপালা, হরিনাম সংকীর্তন , প্রণাম খাটা , মেলা ইত্যাদি। বিভিন্ন জায়গায় ওলাইচন্ডী পূজার মূল  অংশ ঠিক থাকলেও ,বিভিন্ন অংশে হেরফের হয়।           


No comments:

Post a Comment