Wednesday, 18 March 2020

কোরোনা, অবজ্ঞা ক'রো না

লেখকঃ প্রদীপ কুমার রায়

ইমেজ ক্রেডিটঃ PIXABAY 
তারে আমি চোখে দেখিনি তার অনেক গল্প শুনেছি। কেউ তাকে দেখে নি, তবে ভয় পায়।তাকে ধরা ছোঁয়া যায় না, তবু তার অস্তিত্ব সর্বময়। তার পড়াশুনো নেই, হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা নেই। তার সিক্স প্যাক নেই, নাচতে গাইতেও জানে না, তবুও সে সেলিব্রিটি তার নামই যথেষ্ট। সে পৃথিবীজুড়ে গাঁ শহর নির্বিশেষে সর্বত্র আলোচিত নাম। সে খুবই  সামান্য তবুও তার কাছে  সবাই হার স্বীকার করে ফেলছে আর তটস্থ হয়ে পরিত্রানের উপায় খুঁজছে ! রকম সকম দেখে আর শুনে মনে হচ্ছে ২০১৯ খৃষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর চীনের হুবাই প্রদেশের উহান নামক জনপদে আসলে কলির ভগবানই জন্ম নিয়েছেন, আরও অনেক অনেক শিক্ষা দিতে। অদেখায় মানুষের বিশ্বাস স্থাপন করতে। তুচ্ছ ক্ষুদ্র জিনিসে গুরুত্ব আরোপ করতে। আসলে শিক্ষাটাই বাকি থেকে গেছে বোধহয় এই উন্নততর মানব সভ্যতার। ভারতীয়রা  যখন দুহাত জোড় করে "নমস্কার" করতো , বিশ্ব তখন তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছিল। ভারতীয়রা যখন 'হাত-পা' ধুয়ে গৃহে প্রবেশ করতো,তখন বিশ্ব তাদের দেখে হাসতো।ভারতীয়রা যখন  'পশুপূজা' করছিল তখন বিশ্ব তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছিল। যখন ভারতীয়রা 'গাছ জঙ্গলের' সেবা করছিল তখন বিশ্ব হাসছিল।ভারতীয়রা যখন 'প্রধানত নিরামিষী আহারী' ছিল তখন সারা বিশ্ব হাসছিল। ভারতীয়রা 'যোগাব্যায়াম' করার সময়ও সারা বিশ্ব হাসছিল।ভারতীয়রা যখন 'পুজা পাঠ,ধ্যান,যজ্ঞ,' করছিল তখনও  বিশ্ব হাসছিল। ভারতীয়রা যখন  "শশ্মান-হাসপাতাল" থেকে আসত ,তখন বিশ্ব হাসতো। কিন্তু এখন ? এখন 'নমস্তে' বিশ্বের প্রিয়কেউ আমাদের নিয়ে হাসছে না। বাস্তবে বেদে বর্ণিত সমস্ত পদ্ধতি  হল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার এবং সুরক্ষিত রাখার একটি জীবন্ত পদ্ধতি।

ইমেজ ক্রেডিটঃ PIXABAY 


মৃত্যু কতটা নির্জীব করে দিচ্ছে , আপনজনের ইচ্ছে থাকলেও ছুঁয়ে  আর দেখার সাহস হচ্ছে না!    যিনি মারা যাচ্ছেন , প্রিয় মানুষটি তাকে জড়িয়ে  ধরে কাঁদতেও পারছে  না ! অনেক দূর থেকে আর্শিবাদ ,সহমর্মিতা জানাচ্ছে আর দূরে দাঁড়িয়ে  ডুকরে কাঁদছে  ! মানুষ মাঝে মাঝে  ঠিক এতটাই  একা হয়ে পড়ে! বিশ্বজুড়ে ব্যবসায় ধ্বস, কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুরুত্বহীন হয়ে ক্যান্সেল হচ্ছে বা পিছিয়ে যাচ্ছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। তবে তাকে কেউ মারতে পারছে   না। তার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার সাহস নেই কারোর ।একটা জমাট বাঁধা ভয় কেবল মাথার ভেতর গেঁড়ে বসেছে। স্কুল ,কলেজ, অফিস , দোকান , বাজার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে  আর মানুষ ঘর বন্দি হয়ে পড়ছে। বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক আর ত্রাস। এখন ভীড় বাসে কেউ কেশে উঠলে  আতঙ্কের মাত্রা বাড়াচ্ছে  বই কি। আচ্ছা , ফোন করলেই এই যে পুরুষ কন্ঠের খক্ খক্ আর  মহিলা কন্ঠের নিদান: বারবার হাত ধোবেন, চোখে নাকে হাত দেবেন না, ভালো লাগে? মনে হয়, তুমি না বললে আমি বুঝি হাত ধুতাম না? কিংবা কাজ ফেলে কেবলই চোখে আর নাকে হাত দিতাম?খক্ খক্ কাশির শব্দটা কি প্যানিক তৈরি করতে সাহায্য করে? আমরা কি নিজের অজান্তেই বেশি বেশি করে হাত ধুচ্ছি আজকাল? ভুলেও কি নাকে চোখে হাত দিচ্ছি না? হবেও বা।আমরা নিজের ঘরবাড়ি যতটা ঝকঝকে তকতকে রাখি, পাড়া নিয়ে ততটা কি ভাবি? অথবা আমাদের চারপাশ? ভয়টা এখানেই। ফলে একবার ধরে পড়লেই হলো। এপিডেমিক বা প্যান্ডেমিক হওয়া কেবল মুহুর্তের অপেক্ষা  

ইমেজ ক্রেডিটঃ Unsplash 


চীনের ৮৭ বছর বয়সী বৃদ্ধ মানুষটি মারা গেছে, যিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছিলেন বিকালের সূর্যটি দেখানোর জন্য কোন খোলা জায়গায়  নিয়ে যেতে ! কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভাবে সেই কাজটি করেছেন। ইতালিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যখন বাড়ছে, তখন মানুষ সাহস যোগাড় করার জন্য গভীর রাতে একে অপরকে কল দেয় , কথা বলে আর  বাসার বারান্দায় উচ্চস্বরে গান গায়। যতই হোক , মানুষ তো! জীবনের প্রতি অপরিসীম মায়া! স্পেনের এক ব্যবসায়ী তার দোকান  বন্ধ করার পর সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাতেই মারা যায়! তারপরেই সরকার স্পেনে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে ! ইরানী এক পরিবারের জনের জন মারা গেছে তেহরান শহরের! যে একজন বাকি আছে তার অবস্থা কি ভাবা যায়! কুয়েতে  মারা যাওয়ার পর দড়ি  দিয়ে বেঁধে মৃত মানুষটিকে ,মাটি চাপা দিচ্ছে। সত্যই কি অলৌকিক ক্ষমতা এক অনামী , অদেখা তুচ্ছ ক্ষুদ্র জিনিসের। সত্যই , আজ একবিংশ শতাব্দীর সম্মুখে দাঁড়িয়েও মানুষ কত অসহায়!এর অস্তিত্ব আগেও ছিল , বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এর সৃষ্টি নেই , এর ধ্বংস নেই। কেবল মাঝে মাঝে  নিজের স্বরূপের বিবর্তন ঘটিয়ে প্রকাশিত  হয় আর কয়েকদিন পর আবার নিজ  অবস্থানে ফিরে যায়।  ঠিক যেমন এখন মানুষ গরমের অপেক্ষা করছে যাতে সেই তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র জিনিসটি নিজ অবস্থানে ফিরে  যায়  আর মানুষ আবার যথেচ্ছচারিতায় মেতে উঠতে পারে।
ইমেজ ক্রেডিটঃ PIXABAY 


2 comments: