লেখক – প্রদীপ কুমার রায়।
প্রতিপদ থেকে আরাম্ভ করে পূর্ণিমা পর্যন্ত দেবীপক্ষ। কোজাগরী পূর্ণিমার দিন দেবীপক্ষের সমাপ্তি। প্রতিপদ থেকে শুরু করে নবমী পর্যন্ত দেবী পুজো পান যা বাংলার বাইরে নবরাত্রি হিসাবে পরিচিত। রামচন্দ্রের দুর্গাপূজা আমরা অনুসরণ করি। ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ হয়।
রামচন্দ্র পঞ্চমীর দিন স্থির করেন তিনি দুর্গাপুজো করবেন। তিনি পুজো করলেন মোট চারদিন। তিনি পুজো করেছিলেন বিধাতার বাণী মেনে। শাস্ত্রমতে কৃষ্ণা নবমী থেকে শুক্লা নবমী পর্যন্ত দেবী দুর্গার পুজো হওয়ার কথা কিন্তু হয় চারদিন।
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে পনেরো দিয়ে ভাগ করলে, যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকেই একটি মুহূর্ত বলে। এই পনেরো ভাগের প্রতি তিনটি মুহূর্ত এক একটি কাল বলে পরিচিত। যেমন প্রথম তিনটি মুহূর্ত হলো প্রাতঃকাল , তারপরের তিনটি হলো সঙ্গব , তারপরের তিন মুহূর্ত হলো অপরাহ্ন আর শেষ তিন মুহূর্ত হলো সায়াহ্ন । ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন । বোধন অর্থাৎ দেবীকে জাগানো। রাবনকে বধ করার জন্য রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন। সেই সময় সূর্যের গতিপথের দক্ষিণায়নের জন্য দেবতারা নিদ্রিতা ছিলেন। ব্রহ্মার স্তবে দেবী জাগ্রত হন।
এই তিথিটি ছিল ষষ্ঠী , তাই ষষ্ঠীতে দেবীকে জাগানো হয় যা বোধন নাম পরিচিত। বোধনের পরেই আসে অধিবাস। পুজোর আগের দিনে সম্পাদিত কাজকে অধিবাস বলা হয়। অধিবাসের পুজো বেলগাছের মূলেই সম্পন্ন হয়।
দেবীর পুজোর মূল পর্যায় শুরু হয় কলাবউকে স্নান করানোর মাধ্যমে। ঐ কলাবউকে দেবীর ডানদিকে গণেশের পশে রাখা হয় বলে, সাধারণ মানুষ এনাকে গনেশের বৌ বলে ভুল করেন। গণেশের বৌ বা পত্নী হলেন দেবী পুষ্টি । কলাবৌ হলো দেবীর আর একটি রূপ যা নবপত্রিকা হিসাবে পরিচিত। শ্বেত অপরাজিতার লতা ও হলুদ রঙের বন্ধনীর সাহায্যে নটি গাছের চারাকে একত্র করে তৈরী হয় কলাবউ।
ঐ নয়টি গাছের চারা হলো ১) কদলী ২) কচু ৩) মান ৪) জয়ন্তী ৫) বেল
৯) ধান ৬) দাড়িম্ব (ডালিম) ৭) অশোক ৮) হরিদ্রা ৯) ধান । শ্বেত অপরাজিতার লতা ও হলুদ রঙের বন্ধনীর সাহায্যে নয়টি গাছের চারার সমন্বয়টি হলো মা দুর্গার প্রতিনিধি।
ক্ৰমশঃ - দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে-৩
No comments:
Post a Comment