Thursday 1 August 2019

দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে - ১ ( Durga Pujor Prakkale - 1 )

লেখকপ্রদীপ কুমার রায়।

                                দুর্গাপুজো আর কয়েকমাসের মধ্যেই । দুর্গাপুজোর গন্ধ এখন থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছে । কিন্তু দুর্গাপুজোর কথা মনে পড়লেই  মা আর বাবার জন্য মনটা খারাপ হয়ে যায়। সবই আগের মতো আছে , কেবল মানুষ দুটোই নেই। মাকে খুব মনে পড়ছে। দশমীর  সন্ধ্যায় সিঁদুর ভাসানোর বাজনা বাজলেই মাকে  প্রণাম করতাম। মা আমার মাথায় , গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন। মায়েদের হাতের স্পর্শ হয়তো এমনটাই নরম হয়। মায়ের আশীষ অনন্ত হয়ে উঠে আমার জীবনে। এই সব ছবিগুলো হারিয়ে গেল, শুধুই রয়ে গেছে  ঐ  মধুর স্মৃতিগুলো। সময়ের নিষ্ঠূর  বাতাসে ভেসে এগিয়ে চলেছি , আগের ঐ ছবিগুলো আর কোনো দিনও ফিরে পাবো না --------কোনো দিনও না।                                  আমি যখন ছোট ছিলাম তখন প্রতিবার দুর্গাপুজোর সময় বাবা আমাদের সবাইকে দেশের বাড়ী নারুগ্রামে নিয়ে যেতেন আর লক্ষ্মী পুজোর শেষে বর্ধমানে ফিরিয়ে আনতেন। গ্রামের একমাত্র দুর্গাপুজোর অস্ত্রসজ্জা  হতো বাবার হাতেই। বাবার দুর্গাপুজোর প্রতি ছিল গভীর নিষ্ঠা । দুর্গাপুজোর প্রতিটি উপাচার  ও বিধি ছিলো  বাবার নখদর্পণে ।
                      তাই, তাদের কথা মাথায় রেখে , তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে , দুর্গাপুজোর ছোটোখাটো ও খুঁটিনাটি শব্দের অর্থ  যা শাস্ত্র ও পুরাণকে সরলীকরন করে বর্তমান পুজার  সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খোঁজার চেষ্টা করছি ------।
Art of Speaking
                             দুর্গাপুজোর শুরু হয় সাধারণতঃ মহালয়ার দিন থেকেই। এই দিন অর্থাৎ মহালয়ার দিনই হলো পিতৃপক্ষের শেষ দিন । আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে মহালয়া-অমাবস্যা পর্যন্ত হলো পিতৃপক্ষ । এই পিতৃপক্ষের শুরু হওয়ার ঠিক আগে পিতৃলোক থেকে পূর্বপুরুষগণ এই মর্ত্যে আসেন তাদের উত্তর পুরুষের হাতে শ্রাদ্ধাদি নিয়ে তৃপ্ত হতে। শ্রাদ্ধাদি করতে না পারলে মহালয়ার ভোরে  পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করলে তাদের আশীর্বাদ পাওয়া যায় । শ্রাদ্ধের তুলনায় তর্পনের অনেক ব্যাপ্তি আছে। পিতৃকুল, মাতৃকুল, গুরুকুলসহ আরও অনেকের উদ্দেশ্যে তর্পন করা হয়ে থাকে। তর্পনে শ্রাদ্ধ অপেক্ষা একশ গুন বেশি তৃপ্তি লাভ হয়।
                         স্থান মাহাত্ম্য অপেক্ষা কর্ম মাহাত্ম্য প্রধান হওয়ায় , গঙ্গা বা নদী জলাশয়ে তর্পন করতে না পারলে বাড়িতে বসে তর্পন করলেও একই ফল পাওয়া যায়। মহালয়ার ভোরে কিছু সময়ের জন্য মৃত ও জীবিতদের মহামিলন ঘটে ।ঐ সময় বুঝতে পারা যায়, দেহ চলে গেলেও কিছুই হারায় না।
মৃতরা মর্ত্য থেকে স্থান পায় পিতৃলোকে আর পিতৃলোক থেকে স্থান হয় দেবলোকে। যাদের দেবলোকে স্থান হয় তাদের পুনর্জন্ম হয় না। সবার উপরে আছে ঋষিলোক, যেখানে শুধুই ঋষিদের স্থান হয়।

ক্ৰমশঃ - দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে - ২



No comments:

Post a Comment